মোদীর ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ নিয়ে মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিক্রিয়া - BBC News বাংলা (2024)

মোদীর ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ নিয়ে মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিক্রিয়া - BBC News বাংলা (1)

ছবির উৎস, Getty Images

সম্প্রতি ভারতের উত্তরাখণ্ডে এক নির্বাচনি সভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, আজ ভারতে মোদীর শক্তিশালী সরকার রয়েছে, তাই ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীদের হত্যা করা হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। প্রশ্ন করা হয়েছিল ভারতকে নিষিদ্ধ না করার বিষয় নিয়েও। সেই প্রশ্নেরই এবার জবাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

তাকে প্রশ্ন করা হয়, “প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্বাচনি প্রচারের সময় বলেছিলেন নতুন ভারত সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা করতে দ্বিধা করবে না।”

“এক অর্থে তারা কানাডা এবং পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করছেন। এই বিবৃতি কি বাইডেন প্রশাসনের জন্য উদ্বেগের বিষয়?”

এর উত্তরে ম্যাথু মিলার বলেছিলেন, “যেমনটা ঠিক আগেও বলা হয়েছে যে এর মাঝে আমরা ঢুকতে যাব না। তবে ভারত ও পাকিস্তান দু’জনকেই উত্তেজনা এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার জন্য উৎসাহিত করব।“

আরও পড়তে পারেন:
  • আমেরিকায় শিখ নেতা হত্যার জন্য যেভাবে ছক কষেছিল 'ভারতীয় কর্মকর্তা'

  • যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন নাগরিক শিখ নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে গ্রেপ্তার ভারতীয়

  • বিদেশে যে খালিস্তানি নেতাদের সন্দেহজনক মৃত্যুকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে

মোদীর ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ নিয়ে মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিক্রিয়া - BBC News বাংলা (2)

ছবির উৎস, Getty Images

কেন ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা নয়?

এই সংবাদ সম্মেলনেই ম্যাথু মিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “অতীতে আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হত্যাকারী বিদেশিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে আমরা তা দেখি না। এই ছাড় দেওয়ার কারণ কী?”

এর জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, “নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না। তবে তার মানে এই নয় যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।”

“কিন্তু আপনি যদি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমাকে বলতে বলেন, তাহলে বলব যে এটা এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে আলোচনা করি না।”

অতীতে ভারতের বিরুদ্ধে কানাডা, আমেরিকা ও পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে এসেছে।

তবে এখন নির্বাচনি সভা পুরোদমে চলছে। আর তাই হয়ত, সীমান্তের ওপারে গিয়ে 'জঙ্গি নিধনের' মতো মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের নেতাদের।

সম্প্রতি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “ওদের (জঙ্গি) ভাবা উচিৎ নয় যে সীমান্তের অন্যপ্রান্তে আছি বলে আমাদের কেউ ছুঁতে পারবে না। জঙ্গিরা নিয়ম না মানলে তাদের জবাব দেওয়ারও নিয়ম থাকতে পারে না।”

অন্যদিকে, গত ছয়ই এপ্রিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যদি কোনো সন্ত্রাসী আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে ভারতকে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করে, এখানে তৎপরতা চালায় তাহলে তাকে মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে। যদি সে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, তাহলে সেখানে ঢুকে তাকে হত্যা করা হবে।”

মোদীর ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ নিয়ে মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিক্রিয়া - BBC News বাংলা (3)

ছবির উৎস, FB/VIRSA SINGH VALTOHA/ X

গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু এবং হরদীপ সিং নিজ্জর

গত বছর জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা করা হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে দায়ী করে কানাডা সরকার।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে কানাডাকে প্রমাণ দিতে বলে ভারত। হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকে ঘিরে বিতর্কের পর কানাডা এবং ভারতের মধ্যে দূরত্বও তৈরি হয়।

সেই দূরত্ব দেখা গিয়েছিল যে সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি এসেছিলেন।

এরপর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে খালিস্তানপন্থী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলাতে ভারতের নাম জড়ায় ।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে নিউইয়র্কে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার জন্য ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা একজনকে ভাড়া করেন। এর জন্য ওই ব্যক্তিকে প্রায় ৮৩ লাখ টাকাও দিয়েছিলেন মি. গুপ্তা- এমন দাবি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।

সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় ভারত এই সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুর পরিবার, যারা আগে পাঞ্জাবের নাথু চক গ্রামে বাস করত। পরে অমৃতসরের কাছে খানকোটে চলে যান। তার বাবা মহিন্দর সিং পাঞ্জাব বিপণন বোর্ডের সচিব ছিলেন।

১৯৯১-৯২ সালে মি. পান্নু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, যেখানে তিনি কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ফাইন্যান্সে এমবিএ এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

২০০৭ সালে শিখস ফর জাস্টিস প্রতিষ্ঠা করেন গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু। তিনি নিউ ইয়র্কের দফতর থেকে কাজ করেন। সেখানে একটি আইনি সংস্থাও চালান।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারত নয়জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। এই তালিকায় গুরপতবন্ত সিং পান্নুর নামও ছিল।

মোদীর ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ নিয়ে মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিক্রিয়া - BBC News বাংলা (4)

ছবির উৎস, Getty Images

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
  • ইসরায়েল নিজেই তার সিদ্ধান্ত নেবে - ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বললেন নেতানিয়াহু

  • 'ব্যাংকের বেশির ভাগ অর্থ সরকারের কোষাগারে'

  • তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন যে দাবি ভারতে ভোটের ইস্যু

বিদেশের মাটিতে হত্যার অভিযোগ

হরদীপ সিং নিজ্জর ও গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু মামলা ছাড়াও বিদেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার আরো অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের লাহোরের জেলে ভারতীয় নাগরিক সরবজিৎ সিংকে ২০১৩ সালে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন আমির সরফরাজ ওরফে তাম্বা। সম্প্রতি পাকিস্তানে এক আততায়ীর হামলায় আমির সরফরাজের মৃত্যু হয়।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, আমির সরফরাজকে হামলার ঘটনায় পাওয়া তথ্য প্রমাণ ইঙ্গিত করছে এর সঙ্গে ভারতের যোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, “অতীতে কয়েকটা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরাসরি জড়িত ছিল। এই হামলায় ভারতের হাত রয়েছে বলে আমরা সন্দেহ করছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমানে তদন্ত চলছে এবং এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তা সেদিকেই (ভারত জড়িত থাকার) ইঙ্গিত করে। তবে তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া অব্দি আমি কিছু বলতে পারব না।”

অতীতে ভারত সীমান্ত পেরিয়ে এ জাতীয় হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

তবে নির্বাচনি সভা থেকে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য অন্যদিকে ‘ইশারা’ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রিটেনের সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দাবি করেছে, বিদেশের মাটিতে বসবাসকারী দেশবিরোধীদের নির্মূল করার জন্য ভারত বিস্তৃত রণকৌশল অনুসরণ করছে।

'দ্য গার্ডিয়ান'-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ২০২০ সাল থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি কার্যকলাপ চালিয়েছে।

ভারত অবশ্য 'দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “বিদেশের মাটিতে এ জাতীয় হত্যাকাণ্ড চালানো ভারতের নীতি নয়।”

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এই প্রতিবেদন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিষয়টিকে 'নিশ্চিত' বা 'অস্বীকার' কিছুই করেননি।

রাজনাথ সিং বলেছেন, “প্রতিবেশী দেশের কোনো সন্ত্রাসী যদি ভারতে সমস্যা সৃষ্টি করার বা এখানে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে, তবে তাকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।”

মোদীর ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ নিয়ে মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিক্রিয়া - BBC News বাংলা (2024)
Top Articles
Latest Posts
Article information

Author: The Hon. Margery Christiansen

Last Updated:

Views: 6118

Rating: 5 / 5 (70 voted)

Reviews: 85% of readers found this page helpful

Author information

Name: The Hon. Margery Christiansen

Birthday: 2000-07-07

Address: 5050 Breitenberg Knoll, New Robert, MI 45409

Phone: +2556892639372

Job: Investor Mining Engineer

Hobby: Sketching, Cosplaying, Glassblowing, Genealogy, Crocheting, Archery, Skateboarding

Introduction: My name is The Hon. Margery Christiansen, I am a bright, adorable, precious, inexpensive, gorgeous, comfortable, happy person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.